বাংলাদেশের শিল্প (পাঠ ২)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বাংলাদেশের অর্থনীতি | - | NCTB BOOK
110
110

বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ হলেও ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানে কিছু কিছু শিল্প বা কলকারখানা গড়ে উঠতে থাকে। তার মধ্যে পাট, সুতা ও কাপড়ের কলই ছিল প্রধান। পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ববাংলার নারায়ণগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজি জুট মিলস্। পাকিস্তানি আমলে শিল্প বা কলকারখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এ অঞ্চলটি শাসকদের বৈষম্য বা বঞ্চনার শিকার হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করে। এক সময় আমাদের দেশের পাটশিল্পই ছিল প্রধান, সেই সঙ্গে ছিল চা, চিনি, সিমেন্ট, সার, চামড়া, রেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা। বর্তমানে গার্মেন্টস ও ঔষধ শিল্পেও বাংলাদেশ বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে। মূলধন, উৎপাদনের পরিমাণ, কর্মী বা শ্রমিকের সংখ্যা ইত্যাদি বিচারে শিল্প প্রতিষ্ঠানকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়:

বৃহৎ শিল্প

পাট, বস্ত্র, চিনি, সিমেন্ট, সার, রেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিদ্যুৎ প্রভৃতি বৃহৎ শিল্প। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রচুর মূলধন, দক্ষ শ্রমিক ও কারিগর, প্রকৌশলী, বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপকের প্রয়োজন হয়। এসব শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতাও অনেক বেশি। দেশের চাহিদা মিটিয়েও উৎপাদিত সামগ্রীর একটা অংশ বিদেশে রপ্তানি হয়। জাতীয় অর্থনীতিতে এ ধরনের বৃহৎ শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করছে এই শিল্পগুলো।

মাঝারি শিল্প

যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে দেড় কোটি টাকার অধিক মূলধন খাটে সেগুলোকে সাধারণত মাঝারি শিল্প বলে গণ্য করা হয়। যেমন- হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং, সিল্ক, সিরামিক, কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগার প্রভৃতি। দেশের চাহিদা পূরণ ও অনেক লোকের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে এ ধরনের শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ক্ষুদ্র শিল্প

দেড় কোটি টাকার কম মূলধন খাটে যে কারখানা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানে তাকে ক্ষুদ্র শিল্প ধরা হয়। চাল কল, ছোটো ছোট জুতা বা প্লাস্টিক কারখানা, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প এর উদাহরণ।

কুটিরশিল্প

এই শিল্পে উৎপাদন ও বিপণনের কাজটি প্রধানত মালিক নিজে বা তার পরিবারের সদস্যরাই করে থাকেন। আমাদের দেশে তাঁতবস্ত্র, মাটির তৈরি জিনিসপত্র, বাঁশ, বেত ও কাঠের কাজ, শাড়ি বা মিষ্টির প্যাকেট, আগরবাতি ইত্যাদি কুটিরশিল্পের কয়েকটি উদাহরণ। বাংলাদেশের মতো বৃহৎ জনসংখ্যার ও শিল্পে অনগ্রসর একটি দেশে অসংখ্য মানুষের। কর্মসংস্থান ও স্বনির্ভরতা অর্জনের সুযোগ করে দিয়ে। কুটিরশিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্যবান অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শিল্পের অবদান

নগরের বিস্তার ও মানুষের জীবনমান বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শিল্পের ভূমিকা ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। খাদ্য, বস্ত্র, ঔষধের মতো জিনিসগুলো তো বটেই; জ্বালানি, বিদ্যুৎ, গৃহনির্মাণ সামগ্রী ছাড়া আমাদের জীবন আজ অচল। আর এগুলো আমরা কোনো না কোনো শিল্প থেকে পেয়ে থাকি। কৃষির পর দেশের বিরাটসংখ্যক মানুষের জীবিকার সংস্থানও হচ্ছে এই শিল্পখাত থেকেই। এর অভাবে দেশের বেকারত্বের হার আরও বেড়ে যেত। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের প্রসার লক্ষ লক্ষ মানুষ বিশেষ করে নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। এটি দেশের সামাজিক অগ্রগতিতেও ভূমিকা রাখছে। শিল্পখাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ মানুষকে শিক্ষা ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করে তুলছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আমাদের বিশ্বনাগরিক হিসেবে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করছে। তাই বিভিন্ন শিল্প কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক অধিকার সংহত করা যেমন এই শিল্পগুলোর উন্নয়নে জরুরি তেমন শিল্পের প্রভাবে পরিবেশ দূষিত করা বন্ধ করতে সরকারের নজরদারী চালু থাকা অত্যাবশক। না হলে শিল্পায়নের সুফল পাওয়া যাবে না।

বাংলাদেশে শিল্পের সম্ভাবনা

বাংলাদেশ একটি শিল্প সম্ভাবনাময় দেশ। এর রয়েছে বিশাল জনসম্পদ। এখানে অপেক্ষাকৃত কম মজুরিতে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের প্রচুর শ্রমিক পাওয়া যায়। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এদেশে শিল্প স্থাপন ও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন। গার্মেন্টস শিল্প এর একটি বড়ো উদাহরণ। বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে এককভাবে ও যৌথ অংশীদারিত্বে গার্মেন্টস কারখানা স্থাপন করেছে। এদেশে তৈরিপোশাক আজ বিশ্বের বাজারে সমাদৃত হচ্ছে। গার্মেন্টস ছাড়াও অন্যান্য শিল্পেও বিদেশিরা পুঁজি বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সরকার দেশে কয়েকটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা প্রতিষ্ঠা করেছে। তাছাড়া বন্দর ও পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি, ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করার মাধ্যমেও সরকার শিল্পখাতে বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করছে। এসব পদক্ষেপের ফলে আগামীতে দেশে নানা ধরনের শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ইদানীং বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদেরও অনেকে তাদের অর্জিত অর্থ দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এভাবে বাংলাদেশের একটি শিল্পসমৃদ্ধ মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। এর ফলে শুধু যে দেশে দারিদ্র্য হ্রাস ও বেকার সমস্যারই সমাধান হবে তাই নয়, সাধারণভাবে মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি এবং জাতীয় অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে।

কাজ- ১: ক্ষুদ্র, মাঝারি, বৃহৎ কিংবা কুটিরশিল্প-এর যে কোনো এক ধরনের শিল্পের নামোল্লেখ করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তার গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
কাজ- ২: বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শিল্প সম্ভাবনা সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion